সুরমিলা
শহীদুল ইসলাম
আমি তোমার নামে একটা কবিতাই লিখেছিলাম সুরমিলা।
তুমি পড়লেই দেখতে পাবে।
ওখানে কিছু প্রতিহিংসার চোখ।
আর দেখতে পাবে মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা।
আর দেখতে পাবে তুমি তোমাকে।
আর তোমার সুরের শব্দে রচনা করেছি মুক্তির ইতিহাস।
সুরমিলা ঐ একটা কবিতাই যথেষ্ট।
যার প্রতিটা শব্দ পড়ে তুমি কাঁদবে।
তুমি লিখতে গিয়ে কিছুই লিখতে পারবে না।
চোখ ভর্তি অশ্রু স্নানে তোমার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠবে
আমার অজান্তে এতকিছু!
এ ও কি সম্ভব?
হ্যাঁ সুরমিলা।
মানুষের কাছে পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
পৃথিবী ছিল মানুষের বেদখলে মানুষ তা ক্রমান্বয়ে দখল করে নিয়েছে।
এইতো সেদিন মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল।
পশু শিকার করতে শিখল।
পোশাক আবিষ্কার করল।
গুহা ছেড়ে অরণ্য ভূমির বুকে
বড় বড় ইমারত গড়ে তুলল।
মানুষ শৃঙ্খলিত সভ্য প্রাণীর শ্রেষ্ঠত্বতা দেখাল।
অথচ
তুমি সব চেয়ে বেশি অবাক হবে এই মানুষকে দেখেই!
মানুষ টিকে থাকার দ্বন্দ্বে এতটা লিপ্ত হয়ে পড়ল
মানুষ হয়ে উঠল মানুষের শত্রু।
বন্য পশুপক্ষীর শত্রু।
প্রকৃতির শত্রু।
পৃথিবীর শত্রু।
ভোগ এতটা নিচু স্বাভাবের করে তুলতে পারে!
এতটা যান্ত্রিক
এতটা লোভি।
এতটা অসভ্য করে তুলতে পারে
মানুষকে না দেখলে তুমি বুঝতেই পারবে না।
মানুষ কতটা ভয়ংকর প্রজাতির প্রাণী?
এরা একে অপরকে হত্যা করে চলে।
আঘাত করে।
নির্মমতার স্বরূপ এতটা আতঙ্ক প্রবণ।
তোমার বিশ্বাস যোগ্য হবে না।
তুমি জানো
মানুষ নিজের অজান্তে নিজেকেই শাসন করতে উদ্যত হল।
রক্তযুদ্ধ শুরু করল।
মানব ইতিহাসে রক্তের দাগ লাগল।
মানুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে শ্রেণি বিভক্ত হয়ে পড়ল।
সিমান্তে কাঁটাতার দিয়ে বিভক্ত করল একে অপরকে।
তোমাকে করা হল আমার শত্রু।
আমাকে করা হল তোমার শত্রু।
তুমি আমি ক্রমান্বয়ে স্বভাব শত্রু হয়ে উঠলাম।
খুন করতে থাকলাম।
দখল করতে লাগলাম।
অপরাধ প্রবণতার দ্বারা
আমরা সহজ সরল থেকে ক্রমাগত জটিল হয়ে উঠছি।
এখন আমরা বিলুপ্ত প্রজাতির শ্রেষ্ঠ পরাভূত প্রাণী।
অথচ
সুরমিলা একবার ভেবে দেখ
তুমি আমি একদিন এই পৃথিবীর ছোট একটা দ্বীপের উপর আমাদের ছিল আনন্দ স্বর্গ।
এখানে
কোন বাঁধা ছিল না।
কোন লোভ ছিল না।
হত্যার কোন পরিকল্পনা ছিল না।
নিরন্তর
আমরা ঘুরে বেরাতাম একে অপরের হাত ধরে।
আমরা একে অপরকে
ভালোবেসে শত পদ্ম বুকে ধারণ করেছি বারংবার।
সুরমিলা ঐ নীল আকাশটা তোমারো আবার আমারো। অথচ
আজ আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।
তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ না।
বিভক্তির দ্বন্দ্বে আমরা কতটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছি?
আমাদের এতকিছু অথচ আমরা কতটা অসহায়!
সুরমিলা কতদিন তোমাকে দেখিনা?
আর কতদিন তোমাকে দেখতে পাব না?
তোমার সুর কতদিন আমাকে আকৃষ্ট করে না!
আর কতদিন অপেক্ষা করলে বিভক্তির দ্বিধা ঘুচবে?
আমরা আবার একত্রিত হব?
সুরমিলা বলতে পারো
আর কত প্রহর অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?
আর কতদিন এভাবে নিজ ভূখন্ডে মানুষ হবে নির্বাসিত?
মানুষ কি আর কোনদিন মানুষের গান গাইবে না?
তাহলে কি তোমার সুর আর কোন দিন আমি শুনতে পাব না?
আমার একটা কবিতাই যথেষ্ট সুরমিলা
যেভাবে তোমার একটা গান আজও আমাকে স্পন্দিত করে।
ক্রুশবিদ্ধ বুকেও জেগে ওঠে বাঁচার স্বপ্নস্বাদ।
৪/১২/২০১৯