সুহৃদ
শহীদুল ইসলাম
প্রিয় শ্রীলেখা
সময় জানেনা সময়ের শেষ কোথায়?
অথচ সময়ের নিয়মে চলে সব কিছু।
সময় এখানে অবাধ্য,
আমি সময়ের নিয়মে নেই।
আশ্চর্যকর হলো
আমার অনিয়মেও তুমি। আমার নিয়মেও তুমি।
তাহলে কি তুমি আমার সময়, অসময়?
জানিনা তুমি আমার ভালো না মন্দ।
সুখ না অসুখ।
শুধু এতটুকু জানি তোমার ভালোতে আমার ভালোলাগে,
তোমার মন্দতে খারাপ।
কেন এটা হয় তা অবশ্য জানিনা।
সবটা জানতে নেই আর জানতেও চাই না।
শুধু জানি সর্বস্ব মঙ্গল তোমার জন্য হোক।
তোমার দুঃখের কারন হতে চাইনি।
দুঃখ বয়ে বেরনোর অভ্যাসটা বরাবর আমার আছে।
এতকিছু বয়ে বেরাতে পারি আর দুঃখটাকে বয়ে বেরতে পারবো না তা কি হয়?
এটা তো সামান্য।
শ্রীলেখা
তোমার আঁকা ছবিগুলো দিন রাত্রির নিয়মে আছে।
রেখে দিয়েছি।
খাটাশের ছবি।
মুরগীর ছবি।
বর কনের ছবি।
ফুল ফল রবী ঠাকুরের ছবি।
সিধু শব্দের অর্থ সহজ সরল সাদা সিধা।
সিধু শব্দটা ভুলে যাবার মতো নয়।
সব মনে রাখতে নেই আবার সব ভুলে যেতে নেই।
একে বারে ভুলে যাওয়া অন্যায়,
সব মনে রাখাও পাপ।
সব মনে রাখিনি তবে তোমার আর তোমার তোমাকে ভুলিনি।
সেই হাসি সেই গান মনে পড়ে।
তুমি হাসতো শ্রীলেখা!
গাওতো সেই সুরেলা কন্ঠে?
কি দারুন তুমি!
কতটা ভালো হলে একজন
মানুষ ভালো মানুষ হয়? আমার অজস্র ভুল টোকা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছো
আর শিখিয়ে গেলে কত কি?
শ্রীলেখা
মানুষ বাধ্য হয়,
পরিস্থিতির শিকার হয়। পরিস্থিতি মানুষকে পাল্টে দেয়।
পাল্টে যেতে হয়
আমার জন্য হ্যাঁ একমাত্র আমার জন্য
তোমাকে তোমার সমাজের কাছ থেকে
কত মন্দ শুনতে হচ্ছে?
তোমার ক্ষতি হচ্ছে শুধু আমার জন্য।
তোমার জীবনটা কত সুন্দর!
তুমি কত বিশুদ্ধ নির্মল পিত্র!
সে জীবনটা নষ্ট করার অধিকার আমার নেই।
কালো ছায়া হয়ে শুধু শুধু তোমার আলোক উজ্জ্বল জীবনটাকে
অন্ধকারে কেন ঢেকে দেব?
সে ইচ্ছে আমার নেই।
আবার বলার সাহস অসঞ্চিত।
তোমার সৌন্দর্যময় জীবনের সাথে
আমার বিষাক্ত জীবন মিলে তুমি তিক্ত হয়ে যাবে।
কি দরকার এসবের?
মানুষ কত কি চায় সব কি পায়?
কত কিছু আছে যা পেয়েও হারায়?
হারাতে হয়।
হারিয়ে যায়।
আমি তো অতি সামান্য,
মায়া করে লাভ কি?
মায়া তো কুকুরের প্রতিও থাকে
হারিয়ে গেলে মায়া কাঁটাতে হয়।
শ্রীলেখা
এক জীবনের জীবনটাকে গুছিয়ে রেখ।
মিথ্যে অপবাদ, মূলক হবে কেন? এটা অমূলক।
তোমার কালচারে আমি বেশ অগোছালো বেমানান।
বাকিরা সবাই কতটা মার্জিত রুচিসম্মত, উচ্চশিক্ষিত,বিত্তবান, পরিপূর্ণ।
আর আমি ঠিক এর বিপরীত
একেবারে শূন্য।
তুমি তো জানো গোসল না করে থাকা।
অনিয়মিত খাওয়া।
চুল না কাঁটা।
নখ বড় হয়ে যাওয়া।
এসব আমার মাঝে লক্ষনীয়।
তোমার চেষ্টাকে হাজার সালাম।
ক্যাননা একটা পাগলকে তুমি ভালো কারার জন্য
যথার্থ ব্যর্থ অভিপ্রায় দেখিয়েছ।
পাগলরা কি ভালো হয়?
হয় না, শ্রীলেখা।
ভুলে যেও, শ্রীলেখা।
অনাকাঙ্খিত মুহুর্তগুলো।
তোমাকে বেশ ডিষ্টার্ভ করতাম।
এক সাথে কত ডিনার করেছি।
আমার জন্য আলাদা প্লেট,
গ্লাসের কথা ভুলবো না।
পরবর্তীতে আমার বসার চেয়ারে কে বসবে তা জানিনা।
কে আমার প্লেটে আহার করবে তা জানিনা।
কে আমার গ্লাসে জল পান করবে তা আমি জানিনা?
তবে কেউ না কেউ করবে।
কারন এর উপর আমার কোন অধিকার ছিল না।
যেমন তোমার উপর আমার কোন অধিকার নেই।
অধিকারহীন মানুষ কতক্ষণ টেকে?
আমার অধিকার ছিল না
আমি জানতাম।
আমার অধিকার নেই তাও আমি জানতাম।
আমি বাহিরের সম্পর্কে কেউ না তাও জানতাম।
আজও তাই জানি।
তবে আপন করতে পেরেছি কোথায়?
চেয়েছিলাম মাত্র।
শ্রীলেখা
শূন্যতা অনুভব হচ্ছে।
পৃথিবীর মূল্য কমে যাচ্ছে।
বেঁচে থাকার স্বাদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।
তবু যে কটা দিন আছি।
একটু থাকি রাস্তায় গাছের তলায়
ভাঙা কুটিরে একটু হাঁটা চলাও করি নিরুদ্দেশে যাত্রা করি।
যেখানে শুধু সামনে যেতে যেতে অনেক সামনে চলে যাবো
পৃথিবীর পথ পেরিয়ে।
আমার কোন পিছন থাকবে না।
প্রাককাল থাকবে না।
জীবনের প্রতি কোন টান থাকবে না।
কেননা টেনে ধরার মতো কেউ থাকবে না।
আমার পৃথিবীতে আপন বলতে তুমি,
পর বলতেও তুমি।
আপন হয়ে থাকতে পারিনি।
তবে পর হয়ে তো ছিলাম।
এইতো এক জীবনের পরম পাওয়া।
আর কি চাই?
প্রস্থান টানছি
ভালো থেক শ্রীলেখা।
২২/১/২০২০