1. kobitapara@gmail.com : Mohammad Forhad : Mohammad Forhad
  2. mdforhad121212@yahoo.com : Mohammad Forhad : Mohammad Forhad
  3. mdmasum4882@gmail.com : mdmasum :
অদ্ভুত জ্যোৎস্না রাত (গল্প) - জনপ্রিয় বাংলা কবিতার সমাহার

অদ্ভুত জ্যোৎস্না রাত (গল্প)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১
  • ২৮১ Time View

অদ্ভুত জ্যোৎস্না রাত

সানজানা সুলতানা

আজকাল প্রায় রাতে লোডশেডিং হচ্ছে যদিও বিষয়টা আমার মন্দ লাগছে না,কারণ লোডশেডিং হলেই বাইরে বা ছাদে চুপিচুপি গিয়ে হাঁটাহাঁটি করার মজাটা তো আর সচারাচর পাওয়া যায় না।প্রতিদিনের মতো আজও লোডশেডিং, সময় তখন প্রায় সাড়ে নয়টা হবে। আজ একটু মন দিয়েই পড়ছিলাম কিন্তু মন দিয়ে কিছু করতে গেলেই যে সেখানে আমাকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় এ নতুন কিছু নয়।মেজাজটা একটু বিগড়ে গেল পরপর অনেক গুলো ক্লাস হওয়ার কারণে অনেক গুলো নোটস করতে হবে এর মাঝে লোডশেডিং। ছোট বেলার সেই অভ্যাসটা আর নেই যে টবিল ল্যাম্প বা মোমবাতি দিয়ে পড়াশোনা করবো। আর কিছু না ভেবে বাইরে কলপাড়ের সিঁড়িতে গিয়ে বসলাম।মা তখন বারান্দায় বসে ছিলো রাতের খাওয়া শেষ করে। ভাই ও বাড়িতে নেই। মা নানান কথা বলছে কিন্তু আমার কানে যেন কিছুই আসছে না।কারণ বাইরে এসেই আমি ঠমকে গেছি।চোখের দৃষ্টি আঁটকে গেছে চাঁদের মাতাল করা জ্যোৎস্নায়।এই অপুর্ব সৌন্দর্যে যেন হারিয়ে যাচ্ছি কোনো এক নাম না জানা দিগন্তে , ছুটে চলেছি সদ্য জন্ম নেওয়া মৃগশিশুর মতোই।কিন্তু কোনো ভালো মুহুর্তই যে আমার জন্য স্থায়ী নয় আবার সেটা প্রমাণ হলো পরপর বাড়ির সব কয়টি লাইট জ্বলে উঠলো।কি দরকার ছিলো এখনই বিদ্যুৎ চলে আসার কোনো মানে হয়।বাইরে বসে আর লাভ নেই এতোগুলো আলোর কাছে চাঁদের আলো এখন যেন নিভে যাওয়া প্রদীপের শিখা।ঘরে এসে হাতমুখ ধুয়ে আর একটু বই নিয়ে বসলাম কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করলো না একটুও। কিছুক্ষণ বই নাড়াচাড়া করে উঠেই পরলাম।আস্তে আস্তে পা টিপে মায়ের ঘরে উঁকি দিলাম, দেখলাম সে ঘুমিয়ে গেছে।আর কিছু না ভেবে শীতলপাটি নিয়ে ধিরে ধিরে অন্ধকার মাখা সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম ছাদে।সাথে কোনো লাইট ছিলো না এমনকি মোবাইল টাও আনতে ইচ্ছে করলো না।

ছাঁদে এসে পাটিতি বিছিয়ে একদম টানটান হয়ে চাঁদের পানে মুখ করে শুয়ে পরলাম। মনের মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে ভেসে যাচ্ছি হাজারো কল্পনা মাখা জগতে।যে জগৎ আজ নিষিদ্ধ সে জগতেই মন ছুটে চলেছে। সত্যি এক অদ্ভুত রকমের শান্তি যেন আমার মনে জমে থাকা সমস্ত বিষাদ কে এক কোনে সরিয়ে রেখে পুরো জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে এই সৌন্দের্য পরিপূর্ণ নিশ্চুপ জ্যোৎস্না রাত।এমন ভাবেই অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেল।সময়ের দিকে কোনো খেয়াল নেই। কত আর হবে বোধ হয় এগারোটা।

হঠাৎ করে একটা দমকা হাওয়া পুরো ছাঁদের পাশে থাকা গাছগুলোকে একদম নাড়িয়ে দিয়ে গেল, কিন্তু এতোক্ষণ তো সব ভীষণ শান্ত ছিলো একটা পাতা দোলেনি কিন্তু এতো জোরে একটা হাওয়া?এটা নিয়ে আর বেশি ভাবলাম না হাওয়াটা ভালোই লাগলো।আবারও নিজের কল্পনায় ডুব দিলাম। কিন্তু চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল বড় একটা বাদুড়। কেমন যেন একটু লাগলো একটু বেশিই কি বড় মনে হলো।ভাবলাম দেখার ভুল অনেক নিচ থেকে গেছে তাই হয়তো।কিন্তু মনের মধ্যে কেমন একটা অস্বস্তি আস্তে আস্তে তাঁর ডালপালা ছড়িয়ে বেরে উঠছে, চারিপাশ একটু বেশি যেন ঠান্ডা লাগছে। চৈত্র মাসের রাত এমন ঠান্ডা আবহাওয়াও হয়।হয়তো হয় কখনও এমন খোলা আকাশের নিচে থাকা তো হয়নি তাও আবার শুয়ে।হঠাৎ বসে পরলাম মনে হলো কেমন একটা পায়ের শব্দ। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি কোথা থেকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ এসে চাঁদকে আড়াল করার চেষ্টা করছে থেকে থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক।এদিকে ধিরে ধিরে নিঃশ্বাস যেন দ্রুত হয়ে উঠছে আমার। আর তখনই মাথায় আসছে নানান চিন্তা এই বাড়ি নিয়ে প্রচলিত অনেক কথা। এখানে নাকি আগে প্রায় অস্বাভাবিক ঘটনা মানুষের চোখে পড়েছে যে গুলো মেনে নেওয়া কঠিন ।তখন আমরা এখানে বসবাস করতে শুরু করিনি।এখানে আগে ঘন জঙ্গল ছিলো সে কথা একটু একটু মনে আছে।কিন্তু এসব চিন্তাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না এই ভেবে দাঁড়িয়ে পরলাম পাটিতিকে গোছাতে শুরু করলাম হঠাৎ পাশে চোখ পড়তেই যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো একি দেখছি আমি চাঁদের হালকা আলোয় ছাঁদের মেঝেতে আমার ছায়ার পাশেই ঠিক আর একটি লম্বা ছায়া দাঁড়িয়ে বরফের মতে যেন জমাট বেঁধে যাচ্ছে হাত-পা, নিঃশ্বাস আরো দ্রুত হয়ে আসছে চোখ বন্ধ করে জায়গায় বসে পড়লাম আর যতটা সম্ভব শব্দ করে দোয়া পড়তে শুরু করলাম।কি এইটা কে দাঁড়িয়ে আছে আমার পিছনে, আমি আজ নতুন ছাঁদে আসিনি তবে আজ এসব কি দেখছি মনের ভুল নয়তো?শরীর ভারি হয়ে উঠছে ক্রমশ কেমন যেন মনে হচ্ছে কেউ কাঁধের উপরে হাত দিচ্ছে, টেনে নিচ্ছে আমাকে। আরো জোড়ে শব্দ করে আমি দোয়া পড়তে শুরু করলাম। এভাবেই পাঁচ মিনিটের মতো হয়তো দোয়া পড়ে গেলাম। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম। ছাঁদের প্রতিটি আঙিনা আবারও চাঁদের আলোও ভরে গেছে সরাসরি পিছনে না তাকিয়ে বা দিকের দরজার দিকে এক ছুটে চলে গেলাম অন্ধকারের কারণে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে পায়ে খুব জোড়ে আঘাত পেলাম দ্রুত রুমে এসে দরজা বন্ধ করলাম পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের নকটার কোণা উঠে গেছে রক্ত পড়ছে।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে।বোতলের সব পানি খেয়ে শেষ করলাম হঠাৎ ঘড়ির কাটায় চোখ যেতেই ভয়ে কেঁপে উঠলাম, রাত তখন আড়াইটে বাজে এতোটা সময় আমি ছিলাম সেটা ভাবতেই একটু ভয় লাগলো।এতোটা সময় কি করে অতিবাহিত হলো? বিছানায় শুয়ে পড়লাম বড় লাইট নিভিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়েই রাখলাম।সারারাত আর ঘুম হলো না।

মনে মনে এতোদিন একটা অহংকার ভাব নিয়ে ঘুরেছি যে ভয় কখনো আমাকে স্পর্শ করবে না।আসলে অহংকার মানেই যেন পতন। আসলে কেউ পরিপূর্ণ সাহসী নয়।ভয় সবার মধ্যেই লুকায়িত থাকে।শুধু সময়ের ব্যবধানে সে জানান দেয় যে সে আছে।আর কে ছিলো ঐ ছায়া মুর্তিটি সেটার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এই পৃথিবীতে মানুষ ও জীবজন্তু ছাড়াও যে আরো কারো বাস আছে সেটা আমি কখনো অস্বীকার করিনি।আজ সেই অজানা জগতের কিছুটা আভাস আমিও পেলাম। সত্যি আরো এমন অজানা রহস্য আছে এই পৃথিবীতে যা আমাদের সাথেই থাকে কিন্তু আমরা দেখতে পাইনা।তাদের সাথেই আমাদের বসবাস। কেউ তাদের দেখতে পায় আবার কেউ পায় না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো কবিতা দেখুন...